গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে, পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্যতা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে...’। জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে ‘জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ’ গঠিত হয়।
দীর্ঘ বিরতির পর, ১৯৯৭ সালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি এবং প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে নানান প্রতিকূলতায় বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ-এর কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে আসায় প্রথম জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতিও শ্লথ হয়ে পড়ে। এমডিজি ছাড়াও বৈশ্বিক অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কেলিং আপ নিউট্রিশন (SUN) শীর্ষক বৈশ্বিক উদ্যোগ, যেখানে স্বল্পসংখ্যক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই অংশগ্রহণ করেছে এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৪ সালে রোমে অনুষ্ঠিত FAO/WHO আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলনের পরবর্তী দশকের (২০২৫ পর্যন্ত) কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুষ্টি উন্নয়নে তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছে। একইভাবে ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ২০২৫ সালের জন্য নির্দিষ্ট করা ছয়টি পুষ্টি লক্ষ্যমাত্রাও বাংলাদেশ অনুসমর্থন করেছে ।এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে ২০১৫ সালে জাতীয় পুষ্টি নীতি প্রণীত হয়। এভাবে জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির কারণে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রতিও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসডিজি এর দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, ‘দারিদ্র্য নির্মূল, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং টেকসই কৃষি এগিয়ে নেয়া’। এই লক্ষ্যের মধ্যে ২০৩০ সালের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (২.২) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নিম্নোক্তভাবে - ‘‘... ২০২৫ সাল নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের খর্বতা ও কৃশতাসহ সব ধরনের অপুষ্টি দূরীকরণ এবং কিশোরী, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মা ও বয়স্ক নাগরিকের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সহমতে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রাগুলো অন্তর্ভুক্ত।’ এটাও সর্বজনস্বীকৃত যে SDG-এর অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রাও পুষ্টির উন্নয়নে অবদান রাখবে। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলন (২০১৪) ও তার পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্তে ২০১৬-২০২৫ সময়কালকে জাতিসংঘের পুষ্টি কার্যক্রমের দশক ঘোষণা করা হয়। সুতরাং দেশের জন্য উন্নত পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনের এটাই অনুকূল সময়। ফলশ্রুতিতে বলা যায় যে, দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫ এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ও স্থানীয় তথ্য-প্রমাণ এবং প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি এবং মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীকে সহ সভাপতি করে সরকার বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (BNNC) পুনর্গঠন করে। ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে আছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানবৃন্দ। অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন BNNC-এর স্থায়ী টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব। এ ছাড়া স্থায়ী টেকনিক্যাল কমিটির মনোনীত তিনজন পুষ্টিবিদও আছেন এ কমিটিতে।